খবরের সময় ডেস্ক:
শনিবার ৬ নভেম্বর২০২১ইং ঢাকা,গাজীপুর,নারায়নগঞ্জসহ সমগ্র বাংলাদেশে দ্বিতীয়দিনে চলচ্ছে পরিবহণ ধর্মঘট । জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন বন্ধ রেখেছে মালিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধরণ কর্মমুখী মানুষগুলো ।
বুধবার (০৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। এরপরই শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে পরিবহন মালিকরা তেলের দাম কমানো বা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন।
শনিবার সকালে ঢাকা- আরিচা, চন্দ্রা-নবীনগর ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক ঘুরে দেখা যায়,বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছেন অফিসগামীরা। পরিবহনের দেখা না পেয়ে অনেকেই হেঁটে রওনা দিয়েছেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। কেউবা ছুটছেন ভ্যান, রিকশা কিংবা ইজিবাইকে। যেভাবেই হোক সকাল ৮টার আগেই পৌঁছাতে হবে কর্মস্থলে।
পোশাকশ্রমিক শাহজাহান, সুগন্ধা রানী দাস,শেফালী, আক্কাস আলী বলেন,হটাৎ করে কোনো নোটিশ ছাড়াই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পনা করে দাম বাড়ানো হলে আমরা আর ভোগান্তিতে পড়তাম না। শুধু ভোগান্তিই নয়, ঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে না পারলে হাজিরা বোনাস প্রায় ৫০০ টাকা কাটা যাবে। তার ওপর রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ দিয়ে অফিসে পৌঁছাতে হচ্ছে। একদিকে ভোগান্তি, অন্যদিকে হাজিরা বোনাস কাটাসহ অফিসের লোকদের মন্দ কথা শুনতে হবে।
এদিকে,পরিবহণ শ্রমিক,রঘুনাথ,জসীম উদ্দিন, জামাল শেখ,রজ্জব আলী বলেন,সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আমরা বিপাকে পড়ে গেছি । একদিন গাড়ীর চাকা না ঘুরলে আমাদের বউ বাচ্চাসহ না খেয়ে থাকতে হয় । সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উচিত ছিল,পরিবহণ নেতাদের সাথে আলোচনা করা । জানি না,কবে থেকে গাড়ী চলবে ?
কর্মস্থলে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন পোশাকশ্রমিক বিউটি বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী চাকরি করেন জিরানী বাজার। সেখানেই আমি স্বামীর সঙ্গে থাকি। প্রতিদিন সকালে উঠে বাসার কাজ শেষে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অফিসের উদ্দেশে রওনা হই। আজও তাই করেছি। কিন্তু রাস্তায় বের হয়ে দেখি গাড়ি নেই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম কিন্তু গাড়ি আসল না। পরে জানতে পারলাম ধর্মঘট চলছে। আমি ধর্মঘটের খবর শুনিনি। শুনলে হাতে একটু সময় নিয়ে বের হতাম।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন রিকশা-ভ্যানচালকরা। ১০ টাকার ভাড়া তারা হাঁকছেন ২০ টাকা। রিকশাচালক হান্নান বলেন, যাত্রীর খুবই চাপ। সড়কে গাড়িও নেই, সবাই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমিও বেশি ভাড়া নিচ্ছি। এতে দোষের কিছু নেই। আমরা ভাড়া মিট করেই গন্তব্যে রওনা করি। যাদের ইচ্ছে তারা যাবে, যাদের ভালো লাগবে না তারা হেঁটে যাবে।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির আশুলিয়া অঞ্চলের সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, আসলে তেলের দাম বাড়ানোর আগে এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কতিপয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ানোয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি সাধারণ জনগণের বিষয় মাথায় রেখে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান হবে।
পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বাস মালিক দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, আমরা আসলে সমাধান চাই। তেলের দাম বাড়লে ভাড়াও বাড়াতে হবে। আর সেটা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। তা না হলে তেলের দাম কমাতে হবে। দাবি মেনে না নিলে পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
এপার ওপার ট্রান্সপোর্ট এর মালিক,পীযুষ প্লাবন মিতা বলেন,অধিকাংশ গাড়ীর মালিক,ব্যাংক লোনের মাধ্যমে গাড়ী ক্রয় করে থাকেন।আহুত সিদ্ধান্তের কারনে বহুমুখী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে,একদিন গাড়ী বসে থাকা মানে,লোনের কিস্তি তো আর বসে থাকবে না । জ্বালানীর দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাড়া বৃদ্ধি হলে আমাদের আমাদের বলার কিছু ছিল না । আর্ন্তজাতিক বাজারে জ্বালানীর দাম বেড়েছে,তাই আমাদের দেশে বাড়ানো হয়েছে,বেশ ভাল কথা কিন্তু ডিজেল চালিত যানবাহনের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভাল হতো । পীযুষ প্লাবন মিতা আরও বলেন,বিশ্ব মহামারী কোভিড ১৯ এর তান্ডবে অর্থনীতিতে মারাত্মক বিরুপ প্রভাব ফেলেছে । সেই ধাক্কা কেটে উঠতে না উঠতেই জ্বালানী তেলসহ ভোগ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে । পরিস্থিতি স্বাভাবিক হউক,জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসুক,এমনটাই কামনা করছি ।